রিট পিটিশন ৪৪৯৫/২০০৯
অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হয়।
বংলাদেশে স্বতন্ত্রভাবে ধর্ম পালন,চলাফেরা এবং নিজের মতামত প্রকাশের অধিকার সংবিধান দ্বারা সংরক্ষিত। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল, বাংলাদেশ হাই কোর্ট রায় ঘোষণা দেন যে,হিজাব পরা কিংবা না পরা একজন নারীর ব্যাক্তিগত পছন্দ এবং সরকারি কর্মস্থলে নারীদের জন্য পর্দা বাধ্যতামূলক নয়। এই মামলায় সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ ৩৯ অণুচ্ছেদ লঙ্ঘনের অভিযোগ আদালত আমলে নেন। এ প্রসঙ্গে বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং সৈয়দা আফসার জাহান বলেছেন- “ বাংলাদেশে এমন কোনো প্রচলিত প্রথা নেই যা নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য করে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নারীদের এই প্রথা মানতে বাধ্য করার চেষ্টা দেখা গেছে, কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয় বরং সরকারি এবং বেসরকারি কর্মস্থলেও।’’বিচারকরা আরও বলেন যে, এই মামলা প্রমাণ করে যে, পাবলিক স্থান, স্কুল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে নারীদের এবং মেয়েদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
যেমন করে এই মামলা আদালতে এলো
২৮ জুন ২০০৯ সালে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকার ৯ নম্বর পাতায় একটা খবর প্রকাশিত হয়। জনাব আরিফ আহমেদ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,জনসম্মুখে পর্দা না করার ( হিজাব না পরা) জন্য কুড়িগ্রাম উপজেলার আত্নরাম বিশ্বাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা আরজুমান বানু সম্পর্কে অত্যন্ত লজ্জাজনক মন্তব্য করে ( তাকে বে*া বলে গালিগালাজ করা হয়)।এই অপমান সহ্য করতে না পেরে আরজুমান বানু সেই মুর্হুততেই ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে যান। তিনি বিগত ১৯ বছর ধরে শিক্ষকতার সাথে জড়িত, এমন মন্তব্য তার অনুভূতিকে প্রবলভাবে নাড়া দেয় ও সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে। যার ফলে তাকে ৭ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়।পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যম কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করে।
সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, এডভোকেট শাহাবুদ্দিন দোলন সরকারি কর্মকর্তার এমন স্বেচ্ছাচারিতা এবং রূঢ় আচরণের প্রতিবাদে আদালতে রিট করেন।পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কো-পিটিশনার হিসেবে যোগদান করেন।আদালত এই রিটে রুল নিসি জারি করে।
আদালতের নোটিশের পর, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর এর অধীনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২৮ জুন ২০০৯ সালের প্রকাশিত খবরটি সত্য, তবে কমিটির প্রধান এবং জনাব আরিফের পক্ষের আইনজীবী এই যুক্তি দেয় যে, গত ২৫ জুন ২০০৯ এ যা ঘটিত হয়েছে তা সম্পুর্ণ অনিচ্ছাকৃত ঘটনা এবং জনাব আরিফ এর জন্য আদালত ও আরজুমান বানুর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। আরজুমান বানুও আদালতে জনাব আরিফকে ক্ষমা করে দেন, এবং ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আদালত মামলাটি বন্ধ করে দেয়।
শাহাবুদ্দিন দোলন ও কো-পিটিশনার আদালতে এই যুক্তি দেয় যে,সরকারি কর্মকতার এমন আচরণ যে শুধু নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং বৈষম্যমূলক আচরণকেই প্ররোচনা দেয় তা না বরং কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ‘ড্রেস কোড’ সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে কারণ এটি নারীদের ব্যাক্তিস্বাধীনতা ও অধিকারকে সুরক্ষা প্রদান করে।
সাংবিধানিক আইন
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ ৩৯ অণুচ্ছেদ
তথ্যসূত্র