গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং একই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বলবৎ হয়। সংবিধানে এগারোটি ভাগ ও চারটি সিডিউলে বিন্যস্ত মোট ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সংবিধানে ১৭টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। সংবিধান মতে, জাতীয়তাবাদ , সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা- রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত ।
ড. জাহেদ উর রহমান| অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার: সংবিধান বিষয়ে কর্তব্য ও গন্তব্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিকিৎসক
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার: সংবিধান বিষয়ে কর্তব্য ও গন্তব্য। আরিফ খান | আইন ও সংবিধান বিষয়ে গবেষক এবং আইনের কথা.কম এর নির্বাহী সম্পাদক
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান:ভেতর ও বাহির
আরিফ খান । আইন ও সংবিধান বিষয়ে গবেষক এবং আইনের কথা.কম এর নির্বাহী সম্পাদক
৪ নভেম্বর, ২০২৩
বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান:ভেতর ও বাহির
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ । সদস্য খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি,১৯৭২
৪ নভেম্বর, ২০২৩
সর্বজনের অধিকার এবং বাংলাদেশের সংবিধান
আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সম্পাদক, সর্বজনকথা
৪ নভেম্বর, ২০২২
"ধর্মীয় স্বাধীনতা : বাংলাদেশের সংবিধান ও আদালতের রায়ের
আলোকে’"
জনাব আরিফ খান । আইন ও সংবিধান বিষয়ে গবেষক এবং আইনের কথা.কম এর নির্বাহী সম্পাদক
১৬ এপ্রিল, ২০২২
যে কোন জাতি, ধর্ম , বা বর্ণের হোন না কেন, বাংলাদেশে আইনের চোখে একজন নারী এবং পুরুষ সমান। সংবিধান এবং আইনের মাধ্যমে যে সকল নাগরিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, তার সবকটি নারী, পুরুষ এর প্রতি সমানভাবে প্রযোজ্য ।
কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবেন না। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীরা পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবেন। শুধু ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে- জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিকের ওপর কোনো প্রকার- অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা,বাধাদান বা শর্ত আরোপ করা যাবে না।
ব্যতিক্রম নারী ও শিশুদের জন্য উপকারী বা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি ওউন্নতির জন্য রাষ্ট্র যদি কোনো বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সেক্ষেত্রে উপরোক্ত অনুচ্ছেদগুলো বাধা হিসেবে কাজ করবে না।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ২৭
আইনে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারী , পুরুষে বৈষম্য করা যাবেনা । আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও শুধু আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ,বাংলাদেশের যে-কোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের অবিচ্ছেদ্য অধিকার। এই অধিকার বাংলাদেশে সাময়িকভাবে অবস্থানরত (যেমন : বিদেশী নাগরিক বা বিদেশী পর্যটক) অন্যান্য ব্যক্তিরও অবিচ্ছেদ্য অধিকার।বিশেষ করে, আইন অনুসরণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধেই এমন কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করে যাবে না, যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বাসম্পত্তির কোনো ধরণের হানি ঘটে বা তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ২৭
সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অধিকার সমান। ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বা এসব ক্ষেত্রে তার প্রতি কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তির প্রয়োজনে অনেক সময় পৃথক কর্মসূচী প্রণয়ন ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রয়োজন হয় । যেমন, প্রতিবন্ধীদের জন্য কিংবা শিশুদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা দিয়ে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। বিশেষ আইনগুলো বৈষম্য মুলক বলে বিবেচিত হবেনা।
বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তির প্রয়োজনে অনেক সময় পৃথক কর্মসূচী প্রণয়ন ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রয়োজন হয় । বিশেষ আইনগুলো বৈষম্য মুলক বলে বিবেচিত হবেনা।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ২৮
আইনানুযায়ী ছাড়া জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। বাংলাদেশ সুপ্রিম আদালতের মতে , জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার বলতে অন্য যে কোন প্রাণীর মতো শুধুমাত্র বেঁচে থাকা বোঝায় না; মানুষের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা বোঝায় । মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপনের জন্য যেসব অধিকারকে আদালত অপরিহার্য বলে গণ্য করে আদালতের রায়ে সেগুলি স্বীকৃতি পেয়েছে । যেমন, প্রত্যেক ব্যত্তির দূষণ মুক্ত পানি ও বায়ুর অধিকার, খাদ্য ও বস্ত্রের অধিকার , আশ্রয়ের অধিকার, শিশুর পূর্ণ বিকাশের অধিকার, প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার প্রভৃতি ।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩২
বাংলাদেশের সকল নাগরিকের অকারণের এবং হয়রানী মূলক গ্রেপ্তার ও আটক থেকে মুক্ত থাকার অধিকার রয়েছে । কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।কারণ না জানিয়ে তাকে আটক রাখা যাবে না।ওই ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দিতে হবে, যেন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন।গ্রেপ্তারকৃত ও পাহারায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে।ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটক রাখা যাবে না।
ব্যতিক্রম সংবিধান এবং ফৌজদারি আইন অনুযায়ী যে কোন ব্যত্তিকে রাষ্ট্র সন্দেহভাজন বিবেচনায় এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৩
নারী- পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, দেশের যে-কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করবার অধিকার রয়েছে । তবে জনস্বার্থে রাষ্ট্র এই অধিকারের উপর যুক্তি সঙ্গত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
ব্যতিক্রম জনস্বার্থ রক্ষার প্রয়োজনে সরকার ইচ্ছে করলে উপরোক্ত অধিকারগুলোর উপর আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৬
ধর্ম, রাজনীতি , বা ক্ষোভ বে্যক্ত করার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করবার অধিকার রয়েছে ।
ব্যতিক্রম জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনে সরকার ইচ্ছে করলে উপরোক্ত অধিকারগুলোর উপর আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৭
সংগঠনের স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার রয়েছে । তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উপরোক্ত সমিতি বা সংঘ গঠন করবার কিংবা
এসবের সদস্য হওয়ার অধিকার থাকবে না, যদি-
এ জাতীয় সংগঠন
(ক) নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সশ্প্রতি বিনষ্ট করবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়;
(খ) যদি- এ জাতীয় সংগঠন ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।
(গ) যদি- এ জাতীয় সংগঠন রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে
সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা
(ঘ) এর গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানে উল্লিখিত কোন নীতি বিরোধী হয় ।
ব্যতিক্রম জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার প্রয়োজনে সরকার ইচ্ছে করলে উপরোক্ত অধিকারগুলোর উপর আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৮
সংবিধানে বাক-স্বাধীনতা অর্থাৎ মৌখিক ও লিখিতভাবে মত প্রকাশের অধিকার এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হয়েছে ।
ব্যতিক্রম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে সরকার যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৯
ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কেঊ নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোন আইন সম্মত পেশা , বৃত্তি কিম্বা ব্যবসায় নিযুক্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে ।
ব্যতিক্রম সাধারণ স্বার্থে সরকার এই অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন এবং আইন প্রণয়ন করে বৃত্তি বা পেশা চালাবার জন্য যোগ্যতাবলী নির্ধারণ করতে পারবেন ।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৪০
প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বনের , ধর্ম পালনের এবং ধর্ম প্রচারের অধিকার রয়েছে । প্রত্যেক ধর্ম সম্প্রদায়ের ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের , রক্ষণ ও সুরক্ষার এবং বাবস্থাপনার অধিকার রয়েছে । কোন শিক্ষা প্রতিস্থানে যোগদানকারী শিক্ষার্থীকে নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের শিক্ষা গ্রহণে বাধ্য করা, অন্য কোন ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন বা যোগদানে বাধ্য করা এবং অন্য কোন ধর্মের উপাসনায় অংশগ্রহন বা যোগদানে বাধ্য করা যাবে না।
ব্যতিক্রম , কোন বিশেষ প্রথা জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্য বিরোধী হলে আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৪১
প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যকোনো পন্থায় বিলিবণ্টনের অধিকার রয়েছে।আইন অনুসরণ ছাড়া কোনো সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে অধিগ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখল করা যাবে না।
বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তির অধিকার রয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৪২
প্রত্যেক নাগরিকের একা থাকার বা নিজের মত থাকার এবং যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে। আইনগত পূর্ব অনুমতি ব্যতিত কোনো নাগরিকের ঘরে প্রবেশ, তল্লাশী চালনো ও তাকে আটক করা যাবে না। নাগরিকদের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমের (অর্থাৎ সোশাল মিডিয়া ইত্যাদি) গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে
ব্যতিক্রম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার প্রয়োজনে সরকার ইচ্ছে করলে উপরোক্ত অধিকারগুলোর উপর আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৪৩
যে কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্টে মামলা করা যাবে। এটি প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। সংসদ ইচ্ছা করলে হাইকোর্টের পাশাপাশি অন্য কোন আদালতকেও মৌলিক অধিকারসমুহ বলবত করার ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দিতে পারবেন।
ব্যতিক্রম সরকার জনস্বার্থে ইচ্ছা করলে উপরোক্ত অধিকারগুলোর উপর আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৪৪
Copyright © 2023 Aynerkotha.com - All Rights Reserved.